মেঘালয় ট্যুর ৫ রাত ৪দিন।ভিসা প্রসেসিং আর ট্রাভেল ট্যাক্স সহ ৮২০০ টাকায় সকল খরচ। কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, ঘুরবেন, খরচ সহ বিস্তারিত তথ্য দিয়ে দিলাম। আসা করি লেখা টি পড়ে আপনি নিজে মেঘালয় ঘুড়ে আসতে পারবেন কোন ঝামেলা ছাড়া।
মেঘালয় যাওয়ার কথা ভাবছেন?
ভালো কোন গ্রুপ বা কোন প্যাকেজ পাচ্ছেন না? একা গেলে খরচ বেশি তাই ইচ্ছা থাকা সত্যও যেতে পারছেন না? তাহলে আপনার জন্যই আমার এই লেখা।আপনার ভ্রমনে বিন্দু পরিমানে উপকারে আসলেও আমার কষ্ট করে লেখা সার্থক। ছোট বেলা থেকেই মেঘ ছোয়ার ইচ্ছে ছিলো প্রবল। সাজেক(খাগড়াছড়ি) আর নীলগিরি(বান্দরবন) ভ্রমনে মেঘের খেলা দেখে মেঘের প্রতি দুর্বলতা আরও বেশী বেড়ে যায়।ভাবতে থাকি কিভাবে মেঘ আরও কাছ থেকে ধরা-ছোঁয়া যায়।অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হলো।মেঘ ধরার স্বপ্ন নিয়ে মেঘের রাজ্য “মেঘালয়” গেলাম। আমি গত ১৫অক্টোবর রাতের গাড়িতে মেঘালয় যাই এবং ২০তারিখ ফিরে আসি।
ভিসা প্রসেসিংঃ ৮০০টাকা।
ট্রাভেল ট্যাক্সঃ ৫০০টাকা।
১ম রাতঃ
বাসা থেকে সায়দাবাদঃ৩০টাকা।
ঢাকা টু তামাবিল(জাফলং ও একই ভাড়া)বাস ভাড়াঃ ৪০০টাকা।
রাতের খাবার(হোটেল উজানভাটা) ১০০টাকা।
সকালের নাস্তা(বর্ডার সংলগ্ন চায়ের দোকান) ৩০টাকা।
বাংলাদেশ বর্ডার ১০০টাকা।
১ম দিন-২য় রাতঃ
এখান থেকে রুপির হিসাব শুরু।
ডাওকি বর্ডার থেকে শিলংঃ১২০রুপি(লোকাল ট্যাক্সি)।
শিলং থেকে পুলিশবাজারঃ১০রুপি(লোকাল ট্যাক্সি)।
হোটেলঃহোটেল হ্যারিট্যাগ। ওয়াইফাই,এসি,খাবার হোটেলের ব্যবস্থা আছে।৮০০*৩=২৪০০ রুপি(৩রাত ৪দিন)।আরও কম দামে হোটেল পাওয়া যায়।আমার এখানে থাকার কারন না হয় আরেক সময় বলবো।
দুপুরের খাবারঃ৭০রুপি(ভাত/সবজি/ডিম আর ডাল)।
রাতের খাবারঃ১১০রুপি (চিকেন,রাইস,ফ্রাই চিকেন আর কোল্ড ড্রিংক) ।
২য় দিন-৩য় রাতঃ
সকালের নাস্তা: ৩৫রুপি(ডাবল ডিমের রোল)
শিলং টুর প্যাকেজঃ ৩০০+৫৫=৩৫৫রুপি(ওয়ার্ডস লেক ১০রুপি,গোল্ফ ফিল্ড,বিয়াঞ্চি মেমোরিয়াল হল,স্টেট
মিউজিয়াম:৫রুপি, জু:১০রুপি,চা বাগান:১০রুপি,এলিফ্যান্ট ফলস:২০রুপি)।
দুপুরের খাবার:১২০রুপি (ভাত,ডাল,মুরগী কোল্ড ড্রিংক।
বিকালের নাস্তা:২৫রুপি (লোকাল খাবার)
রাতের খাবার:১৪০রুপি(খিচুড়ি, মুরগি,ডাবল ডিম অমলেট,ডাবল ডিম রোল)।
৩দিন-৪থ` রাতঃ
সকালের নাস্তা:৭০রুপি(ডিম রোল,চিকেন আর কোল্ড ড্রিংক)
চেরাপুঞ্জি টুর প্যাকেজ : ৩৫০+৬০=৪১০রুপি(মাওকডক ভিও ভ্যালি পয়েন্ট,ইকো পার্ক ১০রুপি,মৌসুমি ক্যাভ ১০রুপি,মট ট্রপ রক,রামকৃষ্ণ মিশন ১০রুপি,নো কালি কাই ফলস ২০রুপি,সেভেন সিস্টার ফলস,থ্রি সিস্টার ফলস ১০রুপি)
দুপুরের খাবার:৮০রুপি(ভাত,ডাল,মুরগী কোল্ড ড্রিংক)।
রাতের খাবার:৯০রুপি(খিচুড়ি,চপ,চিকেন ললী,চা)।
৪থ’ দিন – ৫ম রাতঃ
সকালে হোটেল থেকে চেক আউট করি।
সকালের নাস্তাঃ ৪০রুপি(ডাবল ডিম রোল,চা)
ডাওকি(মাওলিনং) টুর প্যাকেজঃ ৫০০+৭০=৫৭০রুপি(ক্যানিয়ন ভ্যালি পয়েন্ট ১০রুপি,ব্যাল্যান্সিং রক ১০ রুপি,লিভিং রুট ব্রিজ ২০রুপি,স্কাই ভিউ পয়েন্ট বাংলাদেশ১০রুপি,উমংট ২০রুপি <ক্লিয়ার ক্রিস্টাল রিভার>, ডাউকি বর্ডার) ৪:৩০এ ডাওকি বর্ডার থেকে যাই। তারপর ডাওকি বর্ডার ক্রস করে বাংলাদেশ প্রবেশ করি।
তামাবিল থেকে বাসে সিলেটঃ ৫০টাকা।
সিলেট থেকে বাসে ঢাকাঃ৪৭০টাকা।
রাতের খাবারঃ৭০টাকা(চিকেন পিজা,কফি)
রাতের ২টা বাজে সায়দাবাদ পৌছাই।
রিক্সা ভাড়াঃ৩০টাকা। ভিসা আর ট্রাভেল ট্যাক্স ১১০০টাকা।
ঢাকা টু তামাবিল বর্ডার প্রযন্ত খরচ ৬৩০টাকা।
ভারতে_মোট_খরচ_৪৬৪৫*১.২৫=৫৮০৭টাকা।
তামাবিল_ঢাকা_খরচ_৬২০_টাকা।
মোট_খরচ_৮১৮৭_টাকা।
যদিও সবাই প্রথমে ভ্রমনের বর্ণনা দেয় পরে খরচ।আমার পোষ্টের স্বাস্থ্য ভালো হওয়ায় আর আপনার সময়ের সুবিধার জন্য আমি উল্টো দিলাম।আগে খরচ পরে ভ্রমন বিস্তারিত।
ভ্রমন বিস্তারিত:
এই ভ্রমন ছিলো আমার প্রথম ভারত ভ্রমন।তাই একটু বেশী উৎসাহিত ছিলাম। অনলাইনে IVAC এর ফরম পুরন ও প্রিন্ট করে ডেট নেই তারপর মতিঝিল সেন্টারে চলে যাই। ভিসা ফি ৬২০টাকা দেই।জমা দেওয়ার ৪দিন পর ভিসা পেয়ে যাই।ভিসা পাওয়ার সাথে সাথে ট্র্যাভেল ট্যাক্স দিয়ে আসি ৫০০টাকা।
ঐদিন রাত্রের বাসের ঢাকা টু তামাবিলের টিকিট কাটি। রাত ১১টায় বাস ছাড়ে।অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পরি জানি নাহ।ঘুম ভাঙে হোটেল ঊজান ভাটিতে।হালকা খাবার খেয়ে বাসে উঠে পড়ি। আবার ঘুম দেই এইবার ঘুম ভাঙে #শ্রীমঙ্গল এর আশেপাশে কোন এলাকায় আস্তে আস্তে আকাশ পরিষ্কার হতে থাকে।সিলেট শহর,চা-বাগান,আঁকাবাঁকা রাস্তা আর ভারত বাংলাদেশ সিমান্তের অনেক গুলো ঝর্না দেখতে দেখতে তামাবিল পৌছাই।তখন বাজে সকাল ৭:৩০।
দুই মিনিট পায়ে হাটার পর পৌছে যাই তামাবিল বর্ডার। যেহেতু ৯টা বাজে বর্ডার খুলে তাই নাস্তা এখানেই করে নেই।আশেপাশের এলাকাটা একটু ঘুরে দেখতে দেখতেই ৯টা বেজে যায়।কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াইতামাবিল বর্ডার এর সকল ফর্মালিটি শেষ করে তামাবিল বর্ডার থেকে ডাওকি বর্ডার যাই।ভারতের ইমেগ্রেশন শেষ করে ডাওকি বাজার চলে যাই।ডাওকি বাজার থেকে সকাল ১০টায় লোকাল সুমোতে শিলং পুলিশ বাজার চলে যাই।
পুলিশ বাজার পৌছাই বেলা ১:৩০এ।শিলং পয়েন্টে অবস্থিত হ্যারিট্যাগ হোটেলে তিন দিনের জন্য রুম ভাড়া নেই(এই হোটেলে খাবার ব্যবস্থা,এসি আর ওয়াইফাই এর খুব ভালো ব্যবস্থা আছে।রুম কন্ডিশনও খুব ভালো।)।তারপর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য শিলং বাজারে চলে যাই।খাওয়া দাওয়ার পর ডলার ভাঙাই।মানি এক্সচেঞ্জ এর দোকান আমার হোটেলের নিচেই ছিলো।আমি ৬৩.২০রেট পাই।ডলার রুপি করে রুমে চলে যাই।
বিছানায় পিঠ লাগানোর পর সারারাতের জার্নি আর সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার জন্য ঘুম দেই।ঘুম থেকে উঠি বিকাল ৫.৩০টায়।তারপর হোটেল থেকে বাহির হয়ে পায়ে হেটে পুলিশ বাজার এলাকাটা ঘুরি।কোথায় কি আছে,পাওয়া যায় এই সময়ের মধ্যে খুজে বাহির করি আর MEGHALAYA TOURISUM থেকে ৩০০রুপি দিয়ে শিলং(বড়পানি)প্যাকেজটা কিনি।রাত নয়টা বাজে রাতের খাবার খেয়ে (যদি পারেন অবশ্যই স্ট্রিট ফুড ট্রাই করবেন।
তাহলে অল্প টাকায় অনেক গুলো খাবারের ম্যানু পাবেন।খাবার গূলো অনেক ইয়াম্মি।হালুম) হোটেলে চলে যাই।গলা ভেজানোর জন্য একটু হার্ড ড্রিংক নিয়ে নেই ।রাত্রে হার্ড ড্রিংক লেইস আর চিকেন ললি দিয়ে একটা ভালো আয়োজন করে ফেলি।তারপর কিছুক্ষণ টিভি দেখে আগামীকালের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরি।পরেরদিন সকাল ৭.৩০এ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ৮টা বাজে মেঘালয় টুরিজামের অফিসে গিয়ে টিকিট চেক করাই ৮.৩০এ বাস ছাড়বে তাই সময় পেয়ে এই ফাঁকে সকালের নাস্তা সেরে ফেলি(ডাবল ডিমের রোল।ইয়াম্মি।হালুম )।
সকাল ৮.৩৫এ বাস ছাড়ে।বাসের পরিবেশ ছিলো জোশ।বাস প্রথম নিয়ে যায় “ওয়ার্ডস লেক”।
ওয়ার্ডস লেকঃ
নানা রকম গাছগাছালি আর ফুলের বাহার।সাথে আছে বোট নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা। মোটামুটি রকম একটা যায়গা। তারপর যাই “লেডি হাইডারি পার্ক”।
লেডি হাইডারি পার্কঃ
গাছ,ফুল,বাগান, চিড়িয়াখানা আর শিশুদের জন্য ছোট একটি পার্ক।সবচেয়ে মজা পাই শিকপাঞ্জীর ঘুমানোর স্টাইল দেখে। তারপর যাই “ক্যাটেডরাল র্চাচ”।
ক্যাটেডরাল_র্চাচঃ
খ্রিষ্টান দের প্রাথনা করার যায়গা।খুব সুন্দর আর মনোরম পরিবেশ।কোন প্রকার প্রাথনা না করার পরও র্চাচ থেকে বাহির হওয়ার পর মন খুব ভালো হয়ে গেলো। এরপর বাস নিয়ে যায় “শিলং মিউজিয়াম”।
শিলং মিউজিয়ামঃ
মেঘালয়ের সম্পুন্য ইতিহাস এই খানে লিপিবদ্ধ করা আছে।শুধু তাই নয় এখানে বসবাস করা উপজাতিদের খাবারদাবার, চলাফেরা আর জীবন নিরভর করার কলাকৌশল সহ সকল কিছুই এখানে ছবিতে দেয়া আছে। এরপর যাই “এলিফেন্ট ফলস”।
এলিফেন্ট ফলসঃ
শিলং প্যাকেজে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর আর ভালো লাগে এই জায়গাটায়।তিনটি স্তরে এই ফলস বিভক্ত। প্রতিটি ধাপই খুব সুন্দর। এখানেই আমি দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। এরপর যাই “গলফ কোর্ট”।
গোলফ কোর্টঃ
বিশাল মাঠ,পাশে ব্যস্ত সড়ক আর লোকাল লোকজনের খেলাধুলার দৃশ্য দেখে আমাদের ঢাকার সৌওরাদী উদ্দানের কথা খুব মনে পড়তে থাকে। এরপরে যাই “উমিয়াম লেক”
উমিয়াম লেকঃ
খুবই সুন্দর একটি যায়গা।ক্রিস্টাল ক্লিয়ার পানি,পাহাড়,ব্যস্ত সড়ক আর বোটিং খুব ভালো লাগে যায়গাটা।এটাই ছিলো লাস্ট ভিউ। তারপর বাসে উঠে পড়ি।বেলা ৫টা বাজে শিলং পুলিশ বাজার এসে পৌছাই।এরপর হোটেলে যাই।ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নাই।তারপর সাতটা বাজে রুম থেকে বাহির হই।একা একাই আশেপাশের এলাকাটা ঘুরি।টুকিটাকি শপিং করি।রাতের খাবার খেয়ে ৯.৩০এ রুমে চলে যাই।
আর আগামীকালের জন্য ৩৫০রুপি দিয়েচেরাপুঞ্জি প্যাকেজ কিনি।তারপর রুমে গিয়ে কিছুক্ষন টিভি দেখে ঘুমিয়ে পরি।পরেরদিন সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠি।ফ্রেশ হয়ে হোটেল থেকে বাহির হয়ে মেঘালয় টুরিজাম এর দিকে রওনা দেই যাওয়ার পথেই নাস্তা করে নাই।টিকিট কনফার্ম করিয়ে বাসে উঠে পড়ি।বাস সকাল ৮.৪৫এ ছাড়ে।আঁকাবাঁকা আর উঁচুনিচু পথ পাড়ি দিয়ে চেরাপুঞ্জি টুর প্যাকেজের প্রথম প্লেস মাওকডক পৌছাই।
মাওকডক ভিও পয়েন্টঃ
ব্রীজ , ঝর্না,পাহাড় ঘেষে ব্যস্ত সড়ক।এখান থেকে সুয্যদয় আর সুয্যস্ত খুব ভালো ভাবে দেখা যায়।আপনি চাইলে এখানেই সকালের নাস্তা করতে পারেন। এরপর যাই ইকোপার্ক।
ইকোপার্কঃ
প্রবেশ যখন করি তখন কল্পনাও করতে পারিনি আমার জন্য এত ভালো আর সুন্দর ভাবে এই ঝনা গুলো অপেক্ষা করছে।যতই ভিতরে যেতে থাকি ততই অবাক ভরা চোখে দুই পাশ দেখতে থাকি।হাটতে হাটতে পৌছে যাই মিসিং ফলসে।উফ খুবই সৌন্দর্য।সারাদিন দেখলেও হয়তো দেখা শেষ হবে না।কিছুক্ষণ মুগ্ধ নয়নে দেখার পর বাহির হয়ে যাই।বাসে উঠে বসে পড়ি। এরপর যাই মৌ-সোমাই ক্যাভ।
মৌ সুমাই ক্যাভঃ
এটি একটি পরিত্যাক্ত গুহা।৫মিনিটের মত পথ আছে ভিতরে পাথরের পিছল এর জন্য একপাশ থেকে আরেক পাশে যেতে প্রায় ২০মিনিট সময় লাগে।অন্ধকারময় যায়গা।উঁচুনিচু পাথরের খাজের মাঝে রাস্তা।একটু অসাবধানতায় ঘটে যেতে পারে যে কোন ধরনের দুর্ঘটনা।সিলিপার/হিল পড়ে না যাওয়াই ভালো।বয়স্কদের গুহার ভিতরে প্রবেশ না করাই ভালো।এখান থেকে বাহির হওয়ার পর বাইরের চারপাশের পরিবেশ দেখে ভিতরের পরিশ্রম নিমিষেই ভুলে যাই।
তারপর গিয়ে বাসে উঠে পড়ি।এবার মিশন সেভেন সিস্টার ফলস।
সেভেন সিস্টার ফলসঃ
আমার চেরাপুঞ্জি আর মেঘালয় ঘুরতে আসার সময় যে দুইটি ঝর্না না দেখলেই নয়।তার মধ্যে একটি হলো “সেভেন সিস্টার ফলস”।এই দিন বৃষ্টি না হওয়ায় সাত বোনকে আর জীবিত পাই নাই।পাচ বোনকে পাই ।তবে মেঘ না থাকায় খুব সুন্দর ভাবে ঝর্না গুলো দেখতে পাই।কিছুক্ষন আশেপাশের এলাকাটা ঘুরে বাসে উঠে পরি।
এরপর যাই “মট-ট্রপ”।
মট ট্রপঃ
ভিও পয়েন্ট অফ বাংলাদেশ।মেঘ আর মেঘ বাসের এক জানালা দিয়ে মেঘ প্রবেশ করে আরেক জানালা দিয়ে বাহির হয়ে যাচ্ছে।এত মেঘ ছিলো যে কিছুতেই বাংলাদেশতো দুরের কথা আশেপাশের কিছুই ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছিলো না।মনটা খারাপ হয়ে গেল।ভিন্নদেশ থেকে নিজের দেশকে আর দেখা হলো না।কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর দেখতে না পেয়ে বাসের ড্রাইভারকে যখন বলি আমি বাংলাদেশি “নিজের দেশকে দেখতে না পেরে অনেক খারাপ লাগছে”।
এ কথা শুনে ড্রাইভার আমাকে বলে প্রকৃতির উপর যেহেতু কারও হাত নেই তাই তিনি কিছু করতে পারবেনা তবে আমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।আমিতো অবাক সারপ্রাইজ(!)। কিসের সারপ্রাইজ জিঞ্জাসা করতে বলে পরে জানাবে। আমরা যেহেতু এই প্লেসটা দেখতে পারছিনা তাই আর কি করার বাসে উঠে পরি।আর কি সারপ্রাইজ দিবে তা ভাবতে ভাবতেই পরের প্লেস এর উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
এরপর যাই রামকৃশ্ন মিশন।
রামকৃশ্ন মিশনঃ
হিন্দু ধর্মালম্বিদের পবিত্র স্থান।ভিতরে যাইনি আশেপাশের স্থান গুলো পায়ে হেটে ঘুরে দেখতে থাকি। এরপর যাই “নোহ-কালি-কাই” ফলস।
নোহ কালি কাই ফলসঃ
যে দুইটি ঝর্না দেখার জন্য চেরাপুঞ্জি আসা তার পছন্দের তালিকার প্রথমটি হলো এই ফলস।টিকেট কেটে যখন ভিতরে প্রবেশ করি মনটা খারাপ হয়ে যায়।মেঘের জন্য কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।শুধু ঝর্নার শব্দ শুন্তে পাচ্ছিলাম।
এখানেই দুপুরের খাবার খেয়ে নেই।খাওয়াদাওয়ার পর যখন বাহির হই তখন আমার গন্তব্যর দেখা পাই।মুগ্ধ নয়নে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।পাহাড়ের উপর থেকে ঝর্না দিয়ে পানি গড়িয়ে পরার দৃশ্য যেন এখনও চোখে ভাসচ্ছে।কিছুক্ষণ আশপাশটা ভালো ভাবে দেখে বাসে উঠে পরি।
এখানেই শেষ হয় চেরাপুঞ্জি টুর প্যাকেজের সব গুলো প্যাকেজ।এখান থেকে বাস ছাড়ার ১০মিনিট পর বাসের সুপারভাইজার এসে বলে আমরা যেহেতু আমরা একটা পয়েন্ট দেখতে পারি নাই।তাই আমার জন্য সারপ্রাইজ হিসাবে আমাদের সবাইকে থ্রি সিস্টার ফলস দেখাবে।স্পেশিয়াল রিকুয়েস্ট হিসাবে আমার নাম আর ফ্রম বাংলাদেশ বলে।ওই সময়ের ফিলিংসের কথা লিখে অথবা বলে হয়তো শেষ করতে পারবো না।যাই হোক কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা আমাদের গন্তব্যস্থল পৌছে যাই।
থ্রি সিস্টার ফলসঃ
উচু পাহাড়ের উপর থেকে ঝর্না দিয়ে মাটিতে পানি পরছে অপরসাইডে আবছা আবছা বাংলাদেশ দেখে মনে খুব প্রশান্তি পাই।কিছুক্ষন ঘুরে বাসে উঠে যাই।তারপর বাস ছেড়ে দেয়।সন্ধ্যা ৬টায় শিলং এসে পৌছাই।সোজা রুমে চলে যাই।এরপর ফ্রেশ কেনাকাটা করতে চলে যাই।কেনাকাটা শেষ করে খাওয়া দাওয়া করি।তারপর ৫০০রুপি দিয়ে “মাওলং” টুর প্যাকেজ কিনে রুমে চলে আসি।সকাল সকাল যেহেতু উঠতে হবে তাই জলদি ঘুমিয়ে গেলাম।
পরের দিন সকাল ৭টা বাজে ঘুম থেকে উঠি।ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে হোটেল চেক আউট করি।মেঘালয় টুরিজাম যাওয়ার পথে নাস্তা করে নেই।বাসে উঠে পরি।বাস গিয়ে পৌছায় “ক্যানিয়ন ভ্যালী পয়েন্ট”।
ক্যানিয়ন ভ্যালী পয়েন্টঃ
মেঘের নাচ,পাহাড় আর আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু ব্যস্ত রাস্তা। তারপর যাই “ব্যালেন্সিং রক”।
ব্যালেন্সিং রকঃ
একটা ছোট পাথরের উপর বিশাল বড় একটা পাথর।কিছুক্ষন চারপাশটা দেখেম বাসে উঠে পরি। এবার যাই “লিভিং রুট ব্রিজ”।
লিভিং রুট ব্রিজঃ
আমার মাওলং প্যাকেজ নেওয়ার একটা কারন ছিলো প্রকৃতি আর মানুষের মিশ্রনে তৈরি এই ব্রিজটা দেখা।ব্রিজটা যেমন দেখতে এর তৈরির ইতিহাসও তেমন সুন্দর। এরপর যাই “স্কাই ভিউ পয়েন্ট অফ বাংলাদেশ”।
স্কাই ভিও পয়েন্ট অফ বাংলাদেশঃ
গাছের উপর সিড়ি দিয়ে তৈরি একটা ভিও।প্রচণ্ড খুধা পায় তাই দুপুরের খাবার খেতে খেতে সময় শেষ হয়ে যায়।গাছের উপর আর উঠি না।তারপর যাই “মাওলং ভিলেজ”।
মাওলং ভিলেজঃ
খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটা গ্রাম।যায়গায় যায়গায় ময়লার ঝুড়ি।শুধু এলাকা এখানকার বাচ্চারাও মনে হয় খুব পরিস্কার।এখানে এসে বান্দরবনের দার্জিলিং পাড়ার কথাখুব মনে পড়ে।কিছুক্ষন আশপাশটা দেখে বাসে গিয়ে উঠে পড়ি। এরপর যাই “উমেংগট”।
উমেংগট ক্লিয়ার ক্রিস্টাল রিভারঃ
আমার জিবনে আমি সবচেয়ে বেশি ঘুড়েছি জাফলং।সবসময় ঐ পাশ থেকে ব্রিজ টক দেখেছি এইবার এ পাশ থেকে জাফলং দেখলাম।ব্যপারটায় অন্যরকম ভালোলাগা ছিলো।কিছুক্ষনের জন্য নৌকা ভাড়া নিয়ে ঝর্না জাফলং থেকে নদীটা দেখতে নীল লাগলেও এপাশ থেকে দেখতে পুড়াই সবুজ।নৌকা পাড়ে বেধে কিছুক্ষন পানিতে লাফালাম।
তারপর বাসে উঠে পড়ি।এরপর বাস আমাদেরকে ডাওকি বর্ডার নিয়ে যায়।সবাই নেমে পড়ে সবার জম্য এটা ঘুরার যায়গা হলেও আমার জন্য ছিলো গন্তব্যস্থান। বেলা ৫টা বাজে বর্ডার ক্রস করে বাংলাদেশ পৌছাই।তারপর তামাবিল থেকে বাসে সিলেট।সিলেট থেকে বাসে ঢাকা আসি।
এখানেই আমার ৫রাত ৪দিনের “মেঘের রাজ্য মেঘালয়” ঘুরা শেষ হয়।
দুঃখিত, এত বড় লম্বা ইতিহাসের শেষ লাইন পর্যন্ত আপনাদের ধরে রাখার জন্য অনেক দুষ্টুমি করেছি, ইনফরমাল ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করেছি। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখারও দরকার নেই.. যা ইচ্ছে তা-ই বলুন তবে কষ্ট করে পাশের জনকে জানিয়ে দিন।
বিঃদ্রঃ ভ্রমনে গিয়ে পরিবেশ/চারপাশের পরিষ্কারের ব্যপারে সজাগ থাকা আমার,আপনার, সবার দায়িত্ব।তাই প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করা মোটেও কাম্য নয়।
Comments
Post a Comment