Skip to main content

মন প্রশান্তির হাজাছড়া ঝর্ণা

হাজাছড়া ঝর্ণা
উঁচুনিচু পাহাড় আর টিলা দ্বারা বেষ্টিত রাঙামাটি জেলা দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সবুজের অদ্বিতীয় আবাসস্থল। পাহাড়ি এলাকা বলে রাঙামাটির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রচুর ঝিরিপথ, ঝর্ণা আর ছড়া। তাই রোমাঞ্চপ্রেমীদের পছন্দের তালিকায় উপরের সারিতে রাঙামাটি জেলা জায়গা করে নেয় সবসময়।

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম লেক কাপ্তাই লেক এই জেলাতেই অবস্থিত। রাঙামাটি আর কাপ্তাই নিয়ে লেখার আছে অনেক কিছু, তবে আজ এই জেলায় অবস্থিত হাজাছড়া ঝর্ণা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করবো, যাকে অনেকে খাগড়াছড়ি জেলার অন্তর্গত ভেবে ভুল করে।

রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট নামক জায়গায় অবস্থিত হাজাছড়া ঝর্ণাটি। অবস্থান অনুসারে ঝর্ণাটি রাঙামাটি জেলার অন্তর্গত হলেও ভ্রমণের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা দিয়েই যাওয়াটাই সহজতর। তাই অনেকে ঝর্ণাটিকে খাগড়াছড়ি জেলার অন্তর্গত ভেবে ভুল করে।
পাহাড়ি এ ঝর্ণাটি দিনকে দিন সাজেকগামী পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ সাজেক যাবার পথে বাঘাইছড়ি আর্মি ক্যাম্পের আগেই এর অবস্থান। তাই সাজেক যাওয়ার পথে কিংবা ফিরতি আসার পথে প্রকৃতির এই অনিন্দ্য সৃষ্টিতে ঢুঁ মারা এক প্রকার আবশ্যকীয় হয়ে গেছে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে।

হাজাছড়া ঝর্ণা হতে সৃষ্ট পাহাড়ি ঝিরি;
বর্ষাকালে ঝর্ণাটির যৌবনকাল থাকলেও সারাবছরই কম বেশি পানি থাকায় এদিকটায় পর্যটকদের আনাগোনা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। বাঘাইহাট এলাকার দশ নাম্বার রাস্তার পাশে ঝর্ণাটির অবস্থান বলে ঝর্ণাটি ‘দশ নাম্বার ঝর্ণা’ বা ‘শুকনাছড়া ঝর্ণা’ নামেও পরিচিত।
স্থানীয়দের কাছে অবশ্য ঝর্ণাটি ‘চিত জুরানি থাংঝাং ঝর্ণা’ নামে পরিচিত যার অর্থ মন প্রশান্তি ঝর্ণা। নামটি যে এমনি এমনি দেয়া হয়নি তা ঝর্ণাটির কাছে গেলেই উপলব্ধি করতে পারবেন।

যেভাবে যাবেন
খাগড়াছড়ির দিঘীনালা উপজেলা থেকে চাঁদের গাড়ি, অটো ইজিবাইক কিংবা মোটর সাইকেলে করে হাজাছড়া ঝর্ণায় যাওয়া যায়। অটো ইজিবাইক ভাড়া ৫০০ টাকা রিজার্ভ। তবে এক-দুইজন হলে মোটর সাইকেল করে যাওয়াই ভালো। ভাড়া ৫০ টাকা প্রতিজন।
তবে ঢাকা কিংবা দূর থেকে আসা পর্যটকদের জন্য সাজেক যাওয়ার পথে কিংবা ফিরতি পথে চাঁদের গাড়ি থামিয়ে এই ঝর্ণাটায় ঢুঁ মেরে যাওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। আমার মতে সাজেক যাওয়ার পথেই এই ঝর্ণায় যাওয়া উত্তম কারণ সাজেক থেকে ফেরার দিনে আলুটিলা গুহা, রিসাং ঝর্ণাসহ ঝুলন্ত ব্রীজ বাকেটলিস্টে থাকায় সময়ের স্বল্পতা দেখা যায়।

ঝিরিপথের উপর বানানো অস্থায়ী সেতু;
দিঘীনালা-বাঘাইছড়ি মূল সড়ক হতে ১০-১৫ মিনিট ঝিরিপথ ধরে হেঁটে পৌঁছানো যায় ঝর্ণার পাদদেশে। অত্যন্ত সহজগম্য হওয়ায় কোনোরকম বাধাবিপত্তি ছাড়াই পৌঁছে যেতে পারবেন। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে কিছুদিন আগে ঝিরিপথের পাশেই রাস্তা বানানো হয়েছে যা মূল সড়ক হতে একেবারে ঝর্ণার পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়, কারণ বর্ষাকালে কিংবা বৃষ্টির দিনে পাহাড়ি মাটির রাস্তাটা বেশ পিচ্ছিল হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে ঝিরিপথে পানির স্রোত বেশি থাকায় কিছু জায়গায় গাছের গুড়ি ফেলে বানানো হয়েছে অস্থায়ী সেতু।

হাজাছড়া ঝর্ণা;
এখানে বলে রাখি, দিঘীনালা থেকে হাজাছড়া ঝর্ণা পর্যন্ত রাস্তাটা আপনাকে মুগ্ধ করবে, আমি বাজি ধরে বলতে পারি। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য উপেক্ষা করা যায় না কোনোভাবেই। পাহাড়ি ঢলে মাইনী নদীর উপচে পড়া জলের স্রোত আর সবুজের এই অনাবিল রূপে মন প্রাণ মোহিত হয়ে যায়।
রাস্তার দু’পাশে রয়েছে আদিবাসীদের বসবাস। পথের ধারেই পাহাড়ের গায়ে জুম চাষ সবুজের সৌন্দের্যে অন্যমাত্রা যোগ করে। সবুজে ঘেরা ঝিরিপথ পেরুলেই প্রায় ৮০-৮৫ ফুট উঁচু হতে পতিত পানির কলকল ধ্বনি মনের গহীনে সুখানুভূতির জন্ম দেবে।

অপরূপা হাজাছড়া;
দৃষ্টিনন্দন আর ব্যতিক্রম এই ঝর্ণাটির মূল আকর্ষণ হলো, আপনি এই ঝর্ণার ঠিক নিচে চলে যেতে পারবেন নিরাপদভাবে। হিমশীতল এই জলের স্পর্শ পেয়ে মনকে শান্ত রাখা যাবে না কোনোমতেই। ঝাপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে ঝর্ণার জলে। এতটা পথ হেঁটে আসার ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে নিমেষেই। ঝর্ণার পাদদেশে কোমর সমান পানি থাকায় সাঁতার না জানলেও এই ঝর্ণার পানিতে গোসলের কাজটি সেরে নেয়া যায় সহজেই।
সুউচ্চ পাহাড় থেকে পতিত হওয়া নয়নাভিরাম এই ঝর্ণার রূপ লাবণ্য বলে শেষ করা যাবে না। হাজাছড়া ঝর্ণাটির আরেকটি আকর্ষণ হলো আপনি চাইলে ঝর্ণাটির উৎপত্তিস্থল পাহাড়ের চূড়ায় যেতে পারবেন। পাশেই উপরে যাবার সরু পথ। তবে প্রায় ৮৫ ডিগ্রী খাড়া পাহাড় পেরুনো বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। পাহাড়ে চড়ার অভ্যাস না থাকলে সে পথ না মাড়ানোই ভালো।

অবিরত হাজাছড়া;
হাজাছড়া ঝর্ণা ভ্রমণের পাশাপাশি আরেকটি ঝর্ণাও ঘুরে আসতে পারেন। নাম ‘তৈদুছড়া’ ঝর্ণা। বাঘাইহাট এলাকায় খাওয়াদাওয়ার তেমন ভালো কোনো হোটেল না থাকায় সাথে করে খাবার নিয়ে যাওয়াটাই শ্রেয়।
ঝর্ণাটার সামনের দিকে ফাঁকা জায়গাটায় ছোট খাটো ফ্যামিলি পিকনিক করে ফেলতে পারেন। পাহাড়ের গা থেকে অবিরাম ঝরে পড়া ঝর্ণার দৃশ্য দেখতে দেখতে পিকনিক সেরে ফেলাটা নেহাতই মন্দ হবে না।

দূর পাহাড়ের হাজাছড়া;
তবে দুঃখের ব্যাপার হলো, হাজাছড়া ঝর্ণার ঝিরিপথ ভরে উঠেছে মানুষের ফেলা ময়লা আবর্জনা আর প্লাস্টিক বোতলে। ঝর্ণা মুখে স্থানীয় কিছু দোকানে ডাব, পেঁপে ইত্যাদি বিক্রি করা হয়। কিন্তু আবর্জনা ফেলার তেমন নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় ঝিরিপথেই ফেলা হচ্ছে ডাবের খোলস। শুধু ঝিরিপথেই নয়, মানুষের অসচেতনার শিকার হচ্ছে মূল ঝর্ণাটিও। চিপ্সের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা অপচনশীল আবর্জনাতে ভরে উঠছে ঝর্ণাটি। নষ্ট হচ্ছে ঝর্ণাটির সৌন্দর্য, শ্রী হারাচ্ছে প্রকৃতি।
তাই ঝর্ণাটি রক্ষায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তবে ঝর্ণাটি রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের সচেতনতা। আপনার আমার সচেতনতাই পারে প্রকৃতির এই অনন্য সৃষ্টিকে রক্ষা করতে।

#Rayhan Riad

Comments

Popular posts from this blog

২০১ গম্বুজ মসজিদ

লেখকঃ  জাওয়াদ আলম জারিফ   টাঙ্গাইল নির্মাণাধীন এই মসজিদটি গম্বুজের দিক থেকে প্রথম এবং উচ্চতর দিক থেকে দ্বিতীয় হতে যাচ্ছে। এখনো পুরোপুরি কাজ শেষ হয়নি তবে প্রতিনিয়ত এখানে নামাজ পড়ানো হয়। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের ছাদে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি গম্বুজ রয়েছে। এই বড় গম্বুজের চারপাশে ছোট ছোট গম্বুজ আছে ২০০টি। এই মসজিদের ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১৫,০০০ জন। এই মসজিদে রয়েছে চোখ ধাঁধানো সব কারুকাজ আর উপরের দেয়ালে অংকিত রয়েছে পুরো কুরআন শরীফ। যেভাবে যাবেন ঢাকা মহাখালি থেকে গোপালপুরের সরাসরি বাস রয়েছে। ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা।আবার চাইলে একটু রিলাক্সে এসি বাসেও যেতে পারেন। কল্যানপুর থেকে ধনবাড়ি গামি এসি বাস এ করে ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট নেমে সিএনজি করে গোপালপুর যেতে পারবেন। বাস যেখানে থামে সেখান থেকে অটো বা সিএনজি করে যাওয়া যায় পাথালিয়া ইউনিয়নের এই মসজিদে। আবার ফেরত আসার সময় গোপালপুর থেকে বিকেল পাঁচটায় সর্বশেষ ঢাকাগামী বাস ছেড়েআসে। আর কেউ যদি ট্রেনে যেতে চান তাহলে সকাল ৬:৩০ টায় কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে টাঙ্গাইলের ট্রেনে উঠে চলে যেতে পারেন। খরচ ঢাকা মহাখালি থেকে গোপালপুরের সরাসরি বাস ১৫০-২০০ টাকা। বাসস্ট্য...

সাজেকের জনপ্রিয় সব রিসোর্টের তথ্য

লেখকঃ নুরুল করিম আকাশে শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি দেখতে সবারই ভালো লাগে, আর অনেক সময়তো আমাদের ইচ্ছে করে মেঘকে ছুঁয়ে দেখতে। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক ভ্যালি তেমনি এক স্বপ্নময় স্থান। চারপাশে সাদা মেঘের ভেলা মনের ক্লান্তিকে যেন ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সবুজে ঢাকা পাহাড়, সাদা মেঘ আর আলোআঁধারির খেলায় সবসময় মেতে থাকে এই সাজেক ভ্যালি। বর্ষা, শরৎ এবং হেমন্ত সাধারণত এই তিন ঋতুতে মেঘের লুকোচুরি দেখতে পর্যটকদের বেশি সমাগম ঘটে। পর্যটকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সাজেক ভ্যালিতে থাকার ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে বেশকিছু রিসোর্ট। যেখানে আপনি নিশ্চিন্তে পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে থাকতে পারবেন। হোটেলস ইন বাংলাদেশ এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে অনেকেই সাজেকের হোটেলের তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তাদের প্রতি সম্মান রেখে বিস্তারিত দেওয়া হলো- সাজেক রিসোর্ট সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত এই সাজেক রিসোর্টটি এসি আর নন এসি ভেদে প্রতিটি রুম ভাড়া ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা। রিসোর্টটির দ্বিতীয় তলায় আছে সব মিলিয়ে চারটি কক্ষ। সাথে আছে খাবারের ব্যবস্থাও। সাজেক রিসোর্টটি এমন ভাবে তৈরি করা যে রুমের ভেতর থেকে তাকালেই বাহি...

মেঘের রাজ্য মেঘালয় ভ্রমণ

মেঘালয় ট্যুর ৫ রাত ৪দিন।ভিসা প্রসেসিং আর ট্রাভেল ট্যাক্স সহ ৮২০০ টাকায় সকল খরচ। কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, ঘুরবেন, খরচ সহ বিস্তারিত তথ্য দিয়ে দিলাম। আসা করি লেখা টি পড়ে আপনি নিজে মেঘালয় ঘুড়ে আসতে পারবেন কোন ঝামেলা ছাড়া। মেঘালয় যাওয়ার কথা ভাবছেন? ভালো কোন গ্রুপ বা কোন প্যাকেজ পাচ্ছেন না? একা গেলে খরচ বেশি তাই ইচ্ছা থাকা সত্যও যেতে পারছেন না? তাহলে আপনার জন্যই আমার এই লেখা।আপনার ভ্রমনে বিন্দু পরিমানে উপকারে আসলেও আমার কষ্ট করে লেখা সার্থক। ছোট বেলা থেকেই মেঘ ছোয়ার ইচ্ছে ছিলো প্রবল। সাজেক(খাগড়াছড়ি) আর নীলগিরি(বান্দরবন) ভ্রমনে মেঘের খেলা দেখে মেঘের প্রতি দুর্বলতা আরও বেশী বেড়ে যায়।ভাবতে থাকি কিভাবে মেঘ আরও কাছ থেকে ধরা-ছোঁয়া যায়।অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হলো।মেঘ ধরার স্বপ্ন নিয়ে মেঘের রাজ্য “মেঘালয়” গেলাম। আমি গত ১৫অক্টোবর রাতের গাড়িতে মেঘালয় যাই এবং ২০তারিখ ফিরে আসি। ভিসা প্রসেসিংঃ ৮০০টাকা। ট্রাভেল ট্যাক্সঃ ৫০০টাকা। ১ম রাতঃ বাসা থেকে সায়দাবাদঃ৩০টাকা। ঢাকা টু তামাবিল(জাফলং ও একই ভাড়া)বাস ভাড়াঃ ৪০০টাকা। রাতের খাবার(হোটেল উজানভাটা) ১০০টাকা। সকালের নাস্তা(বর্ডার সংলগ্ন চায়ের দোকান) ৩০টাকা। বাং...