সন্ধ্যায় গোধুলীর আলো,নদীর জলে রূপালী চাঁদের প্রতিচ্ছবি ও ভোরের আকাশে সোনালী সূ্র্য দেখে আসার প্ল্যান
সন্ধ্যায় গোধুলীর আলো,নদীর জলে রূপালী চাঁদের প্রতিচ্ছবি কিংবা ভোরের আকাশে কুয়াশার চাদর গায়ে জেগে উঠা সোনালী সূ্র্য। এমন একটি রাত কাটাতে চান অনেকেই।
বিভিন্ন সময় যাদের প্রশ্ন ছিল কোথায় যাবেন ? কিভাবে যাবেন ? তাদের জন্য সুন্দর ও উপভোগ্য সময় কাটাতে আমার এই পরামর্শ। আশাকরি খুবই ভাল লাগবে।
সারা দিনের ব্যাস্ততা শেষ করে কোন এক বৃহস্পতিবার বিকেলে চলে আসুন ঢাকা নদী বন্দর সদরঘাট এর লালকুঠি ঘাট এ ( চাঁদপুর ঘাট), এখানে বিকাল ৪ঃ৩০ থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করবে বাংলাদেশ এর অভ্যান্তরীন নদী পথের সবচেয়ে নিরাপদ, আধুনিক জাহাজ বি আই ডব্লিও টিসি এর রকেট সার্ভিস এর অন্তঃগত এম ভি মধুমতি।

আগে থেকে টিকেট না করে থাকলে ঘাটেই কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করে উঠে পরুন। তবে পারলে যতদুর সম্ভভ আগে টিকেট করে নিবেন, কারন আপনার মত অনেকেরই প্রথম পছন্দ এম ভি মধুমতী জাহাজ তাই ঘাটে প্রথম শ্রেনীর টিকেট নাও পেতে পারেন, আর হ্যা মনে রাখবেন এই জাহাজটির টিকেট মূল্য সরকার নির্ধারিত তাই অতিরিক্ত টাকা দিয়েও টিকেটের আকাঙ্ক্ষা পূরন যাবেনা।

এবার চলে আসুন জাহাজের ৩য় তলায় পেছনে, ওপেন ডেকে সাজানো চেয়ারে কিংবা কোলাহল এড়াতে জাহাজের ২য় তলায় সামনের অংশে নিরিবিলি বসতে পারেন, সাথে গরম গরম ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর কোরাল ফিস ফ্রাই শেষ হতে না হতেই ধুমায়িত চা নিয়ে হাজির হবে মেরুন পোশাকে সজ্জিত ষ্টুয়ার্ড বা সার্ভিস বয়।

ইট পাথরের ঢাকা শহরেও পশ্চিমের হেলে পড়া সূর্যটা বূড়িগঙ্গা নদীতে সোনালী আলোর দারুন আবহ তৈরি করে, ঢেউ উপর চক চকে প্রতিচ্ছবি মাড়িয়ে বৈঠা টানা পারাপারের নৌকা গুলো ঠিকই আপনাকে রোমাঞ্চিত করবে। ঠিক ৬ঃ৩০মিনিটে ব্যাস্ত শহর ঢাকাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে জাহাজ। আপনার পাশ দিয়ে চলে যেতে পারে দু একটি লঞ্চ কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই সূষম গতিতে চলা এম ভি মধুমতি এর। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ কিংবা মুন্সিগঞ্জ শহরের বাতাস ঠেলে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষা পার হয়ে আপনি চলে আসবেন মেঘনায়।

দূর গায়ের গাছ গাছালির ফাকে যদি তখনো চাঁদ উকি না দেয় তাহলে একটু আগে ভাগেই রাতের খাবার খেয়ে নিতে পারেন। সাদা ভাত, ৮/১০ রকমের ভর্তা, ডাল, সবজি আর সাথে ইলিশ বা কোরাল যদি পছন্দ না হয় তবে ভূনা খিচুরি, ইলিশ ভাজা বা ডিম আর মুরগির সাথে জলপাই আচার।

এবার এক কাপ গরম চা নিয়ে বসে পরতে পারেন চাঁদ দেখতে।বিশাল মেঘনায় হিমেল হাওয়া আর মৃদু ঢেউ আপনাকে নিয়ে যাবে এক ভিন্ন জগতে। আকাশে রূপালী চাঁদ আর নদীতে তার প্রতিচ্ছবিতে দেখবেন বাংলা মায়ের আসল রুপ। জেলেদের নৌকায় মাছ ধরা আর ঢেউ এর উপর আছরে পরা চাঁদের আলো আপনাকে বিমোহিত করবে।

চলতে চলতে মেঘনা ছেড়ে ডাকাতিয়া নদীতে প্রবেশ করবেন। কখন যে ঘড়ির কাটা রাত ১০টা পার করেছে বুঝতেই পারবেন না।এবার আপনার চাঁদপুর নামার পালা। আগেই যদি রিটার্ন টিকেট না করে থাকেন তাহলে ঘাটের কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করুন। একটু এগিয়ে চলে যান বাজারের দিকে। ভাবছেন এত রাতে বাজার! হ্যা ঠিকই বলছি বাজারে গিয়ে দেখতে পাবেন ইলিশ আর ইলিশ দেশের সবচেয়ে বড় ইলিশের বাজার থেকে নিয়ে আসতে পারেন গোটা কয়েক, তরতাজা ইলিশ, আর দামেও কম পাবেন। বড় বড় ইলিশ দেখিয়ে বাড়িতে রেখে আশা প্রিয়জনদের তাক লাগিয়ে দিতে পারেন।

এবার ফেরার পালা। রকেট ঘাটে (চাঁদপুর স্টীমার ঘাট) আপনার জন্য অপেক্ষা করছে শতবর্ষী প্যাডেল ষ্টীমার। বিশ্ব জোড়া যার খ্যাতি। এই প্যাডেল ষ্টীমার দেখতেই সারা বিশ্ব থেকে অগনিত পর্যটক বাংলাদেশে আসেন হাজার হাজার ডলার পাউন্ড খরচ করে। একবার ভাবুনত বিশ্বের নামি দামি ব্যাক্তি বর্গ,রাষ্ট্র নায়ক কিংবা ভ্রমন পিপাসীদের যে ষ্টীমার স্বাগতম জানিয়েছে আজ সে আপ্নাকেও স্বাগতম জানাচ্ছে। একদিন হয়ত কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে যাওয়া প্যাডেল জাহাজ গুলো কিন্তু সেই ইতিহাসের অংশ হয়ে সাক্ষী থাকবেন আপনিও।উঠে পরুন, চলে যান ২য় তলায় সামনের অংশে, বসে পড়ুন চেয়ারে যেখানে বসেছিলেন মহারাণী ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু করে হাল আমলের ক্লিনটন এর মত হাজারো রথী মহারথী গন।
ডাকাতিয়া নদী থেকে বের হয়ে ষ্টীমার যখন মেঘনায় আসবে, দুই পাশের প্যাডেল এর ছলাত ছলাত শব্দে আপনি হারিয়ে যাবেন ভিন্ন জগতে। ছন্দ পতনহীন ছন্দের তালে তালে এক কাপ গরম চা আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার সেরা ভ্রমনের স্মৃতির পাতায় নতুন করে কিছু লেখার ভাবনায়। ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসার আগেই সকালের সূর্য উঁকি দিবে দূরে পল্লব ঘেরা কোন এক গাঁয় । পূবের আকাশে সোনালী আলোর বর্ণীল আবহ আপনাকে অভিবাদন জানাবে নতুন একটি দিনে। নদীতে বসে সূর্যোদয় দেখার অভিজ্ঞতাটা আপনাকে নিয়ে যেতে বন্ধুদের আড্ডার কেন্দ্র বিন্দুতে।
সকালে ঘড়ির কাটা যখন ৬ টা ছুই ছুই ষ্টীমার তখন সেই কোলাহল মুখর ঢাকার সদরঘাট এর লালকুঠি পল্টুন এ।

এবার আপনার নামার পালা, কিন্তু একটা কাজ বাকী, চেয়ে নিন ভিজিটরস বুক, লিখে ফেলুন আপনার অভিজ্ঞতা বা পরামর্শ। সাথে ষ্টীমারে তুলে নিতে পারেন আপনার দু একটি ছবি। আপনার এই ছবিই একদিন কথা বলবে শব্দ ছাড়া, আপনার এই ছবিই একদিন মনে করিয়ে দিবে আপনি ইতিহাসের একজন।
চলুন জেনে নেয়া যাক বি আই ডব্লিও টিসি এর স্টীমার ও জাহাজ এর সময় সুচীঃ
সাধারনত জাহাজ গুলোঃ ঢাকা – চাঁদপুর – বরিশাল – ঝালকাঠি – কাউখালী – হুলারহাট – চরখালী – বড় মাছুয়া (মঠবাড়িয়া) – সান্ন্যাসি – মোড়লগঞ্জ অবধি যায় । প্রতি সোম ও বৃহস্পতি বার সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট এ ঢাকা নদী বন্দর এর লালকুঠি ঘাট থেকে ছেড়ে যায় । মোড়লগঞ্জ ও বরিশাল থেকে ছেড়ে আসেঃ প্রতি শনি ও বুধবার । শুধু বুধবার ঢাকা থেকে খুলনা এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ঐতিহ্য বাহী প্যাডেল স্টীমার পি এস মাহসুদ ।
শনিবার – পি এস লেপচা / পি এস টার্ন ।
রবিবার – পি এস মাহসুদ ।
সোমবার – এম ভি বাঙালি / মধুমতি ।
মঙ্গলবার – পি এস লেপচা / পি এস টার্ন ।
বুধবার – পি এস মাহসুদ ( মংলা হয়ে খুলনা পর্যন্ত যাবে) ।
বৃহস্পতিবার – এম ভি মধুমতী / বাঙালি ।

সময় সূচীঃ
ঢাকা থেকে ছাড়ে সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ মিনিটে।
১১ঃ০০ রাত চাদপুর ছাড়ে।
৬ঃ০০ সকাল বরিশাল ছাড়ে।
৮ঃ০০ সকাল ঝালকাঠি ছাড়ে।
৯ঃ৩০ সকাল কাউখালী ছাড়ে।
১০ঃ০০বেলা হুলারহাট ছাড়ে।
১১ঃ৩০ বেলা চরখালি ছাড়ে।
১ঃ০০ দুপুর বড় মাছুয়া ছাড়ে।
২ঃ০০ দুপুর সন্যাসী ছাড়ে।
২ঃ৩০ মোড়েলগঞ্জ ছাড়ে।
৬ঃ০০ সন্ধ্যা মংলা ছাড়ে।
৮ঃ৩০ রাত খুলনা পৌছে।
ফিরতি ট্রিপঃ
২ঃ৪৫ ভোর খুলনা ছাড়ে।
৬ঃ০০ সকাল মংলা ছাড়ে।
৯ঃ৩০ সকাল মোড়েলগঞ্জ ছাড়ে।
১০ঃ০০ সকাল সন্যাসী ছাড়ে।
১১ঃ০০ বেলা বড় মাছুয়া ছাড়ে।
১ঃ০০ দুপুর চরখালি ছাড়ে।
২ঃ০০ দুপুর হুলারহাট ছাড়ে।
২ঃ৩০ দুপুর কাউখালী ছাড়ে।
৪ঃ০০ বিকেল ঝালকাঠি ছাড়ে।
৬ঃ৩০ সন্ধ্যা বরিশাল ছাড়ে।
১ঃ০০ রাত চাদপুর ছাড়ে।
৬ঃ০০ সকাল ঢাকা পৌছে।
ঢাকা থেকে প্রতি শুক্র বার সার্ভিস টি বন্ধ থাকবে । মোড়লগঞ্জ / বরিশাল থেকে প্রতি রবি বার সার্ভিস টি বন্ধ থাকবে ।
ভাড়ার তালিকাঃ

সকল ঘাট এ যোগাযোগ নম্বরঃ
বাদামতলী ও লালকুঠি ঘাট, ঢাকা
সৈয়দ শাহ বরকত উল্লাহ
০১৭১২ ৬০০ ১০৫
চাঁদপুর ঘাট
মনির হোসেন
০১৯৩০ ৩৭২ ৯৯৫
বরিশাল ঘাট
আবুল কালাম আজাদ ও চন্দ্র শেখর রায়
০১৭১৯ ৩০৪ ১২০ , ০১৭১৭ ০৪৪ ৮৯৯
ঝালকাঠি ঘাট
মোঃ মিরাজ হোসেন
০১৭৫৩ ০৮৫ ৯৮১
কাউখালী ঘাট
মোঃ সাইদুর রহমান
০১৭১৬ ৪৫১ ৩৮৭
হুলারহাট ঘাট
শাহীন ফকির
০১৭১৪ ৭৯৭ ৩১৩
চরখালী ঘাট
জনাব আব্দুল হাই
০১৭১৫ ৫৮৭ ১৩৬
বড় মাছুয়া ঘাট
মোঃ ফজলুল হক ও মোঃ জাকির হোসেন
০১৯১৭ ৯২৯ ১৭৭ , ০১৭১৪ ৬৬০ ৪৩৩
সন্নাসী ঘাট
মোঃ বাবুল বয়াতী
০১৭২৫ ৬০০ ২৪১
মোড়েলগঞ্জ ঘাট
মোঃ লিয়াকত আলী
০১৭১২ ২১২ ৬৫৯
মোংলা ঘাট
এস এম ফরিদুজ্জামান
০১৬১৩ ৬৩৭ ৩১৮
খুলনা ঘাট
মোঃ আব্দুল মান্নান ও শেখ নাজমুল হোসেন
০১৭১১ ২৭৮ ৪৭৮ , ০১৮৫৯ ৫০৯ ৩৬৭
বি আই ডব্লিও টিসি এর রকেট সার্ভিস এর যে কোন জাহাজ বা স্টীমার এ আপনার নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রা নিশ্চিত করতে ০২ ৯৬৬ ৭৯৭৩ এই নম্বর এ যোগাযোগ করতে পারেন।
টিকিট সংগ্রহ করুন এখান থেকে –
মোঃ সালাউদ্দিন, এসিস্টেন্ট ম্যানেজার কমার্স / রকেট রিজার্ভেশন
বিআইডব্লিউটিসি (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন)
ফেয়ারলী হাউস : ২৪ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ
বাংলামটর, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০।

লেখাঃ মীর আব্দুল খলিল (ঈশদ সংযোজিত ও পরিমার্জিত)
Comments
Post a Comment